বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫৯ পূর্বাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম:
সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসী শক্তির বিরুদ্ধে দীর্ঘ বিশ বছর সংগ্রাম করে আফগানিস্তানকে দখলদার মুক্ত করায় স্বাধীনতাকামী তালেবানকে অভিনন্দন জানিয়েছে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ।
আজ (১৬ আগষ্ট) সংবাদপত্রে প্রেরিত এক বিবৃতিতে জমিয়তের পক্ষ থেকে বলা হয়, মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো বাহিনী আফগানিস্তান থেকে চলে যাওয়ার পর একের পর এক প্রদেশ তালিবানদের হাতে চলে আসা এবং সর্বশেষ রাজধানী কাবুলে রক্তপাতহীন প্রবেশ করা একথাই প্রমাণ করে আফগানিস্তানের সাধারণ জনগণ তালিবানের সাথেই রয়েছে।
তালিবানের সংঘাতহীন কাবুল জয় সেই ঐতিহাসিক মক্কা বিজয়ের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। তাদের কাবুলে প্রবেশ করায় কোন ধরনের সংঘাত-সংঘর্ষ, খুন, লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগ না হওয়া এ বিষয়ে গুলো যে সতর্কতার সাথে তালিবানরা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে তাই তাদেরকে মোবারকবাদ জানাতে হয়।
জমিয়ত নেতৃবৃন্দ বলেন, কাবুলে প্রবেশের প্রাক্কালে তালিবান নেতৃবৃন্দ যে বক্তব্য দিয়েছেন, “তারা এসেছে শান্তি, নিরাপত্তা, সম্মান, সুখ ও মুক্ত জীবনের বার্তা নিয়ে। কোন নাগরিকের উদ্বিগ্ন হবার কোন কারণ নেই। পালানোর দরকার নেই” এর উপর তারা অটল থাকবেন। প্রতিহিংসা, প্রতিশোধের নীতি অবলম্বন না করে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছে তালেবানরা।
জমিয়ত নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, জমিয়ত যে কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বহিঃশক্তির হস্তক্ষেপ বিরোধী। জমিয়ত যেভাবে আশির দশকে সেভিয়েত সাম্রাজ্যবাদের আফগানিস্তানে সামরিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ছিল ঠিক এ সময়েও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নেতৃত্বে ন্যাটো বাহিনীর আফগানিস্তানে সামরিক অভিযানের বিরোধী জমিয়ত। শান্তি নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে আধুনিক বিশ্বে আমেরিকার নেতৃত্বে যে দেশেই সামরিক আগ্রাসন চালানো হয়েছে, সেখানে শান্তির পরিবর্তে ধ্বংস ছাড়া আর কিছুই উপহার দিতে পারেনি। বর্তমান মধ্যপ্রাচ্য এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মার্কিনীরা সপ্তম নৌবহর পাঠিয়ে সামরিক হস্তক্ষেপ চালাতে চেয়েছিল। কিন্তু বীর বাঙালির দৃঢ়তার কারণে আমেরিকা তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছিল। মার্কিনীদের সামরিক আগ্রাসন ক্ষতি ছাড়া বিশ্ববাসীকে আর কিছুই দিতে পারেনি। পঞ্চাশ দশকের শেষদিকে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ভিয়েতনামে সামরিক আক্রমণ করে টিকে থাকতে পারেনি। তল্পিতল্পা নিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়।
জমিয়ত নেতৃবৃন্দ মনে করেন, তালিবানদের এ বিজয় আবারও এ কথা প্রমাণ করে, যে কোন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার একমাত্র ঐ দেশের জনগণের। তারাই তাদের উন্নতি, অগ্রগতি, শাসনব্যবস্থা, শিক্ষাদিক্ষা ও অর্থনৈতিক স্বাবলম্বীতার পথ ও পন্থা নির্ধারণ করবে। বাহির থেকে হস্তক্ষেপ করা বা কিছু চাপিয়ে দেয়ার দ্বারা ঐ দেশের শান্তি নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠিত হয় না।
জমিয়ত নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, তালিবান কোন ধরনের উগ্রপন্থা অবলম্বন না করে আফগানিস্তানের পুনর্গঠন, অর্থনৈতিক স্বাবলম্বীতা অর্জন, আফগান নাগরিকের শিক্ষা বিশেষ করে নারী শিক্ষার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেবে। তারা সত্যিকারে একটি আদর্শ ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট হবে। কোন ধরনের গোষ্ঠীগত দাঙ্গা- সংঘাত সৃষ্টি না হয়, সেদিকেও বিশেষ দৃষ্টি রাখবে। কাবুল জয়ের পর শান্তি, নিরাপত্তা ও ভিন্ন মতাবলম্বীদের হয়রানি না করার যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে তা ধরে রাখবে।
তালিবান নেতৃবৃন্দের প্রতি জমিয়তের প্রত্যাশা, আন্তর্জাতিক নীতির ক্ষেত্রে তালিবান ভারসাম্যপূর্ণ পন্থা অবলম্বন করবে। প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে সংঘাতে না জড়িয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনের প্রতি জোর দিবে।
জমিয়ত নেতৃবৃন্দ বলেন, ঈমানের দৃঢ়তা, আল্লাহর উপর ভরসা, আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত নিছক অত্যাধুনিক অস্ত্রের নির্ভরতা মানুষকে চূড়ান্ত বিজয় এনে দিতে পারেনা। আফগানের ইতিহাস এর জলন্ত প্রমাণ। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিতে তালিবানের এ বিজয়ে কোনো স্বার্থান্বেষী মহল যাতে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপতৎপরতা চালাতে না পারে, সে ব্যাপারেও সকালকে সজাগ দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানান জমিয়ত নেতৃবৃন্দ।
বিবৃতিদাতাগণ হলেন জমিয়তের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাওলানা জিয়াউদ্দিন, সহ-সভাপতি মাওলান ওবায়দুল্লাহ ফারুক, মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা বাহাউদ্দিন যাকারিয়া, মাওলানা আব্দুল বছির সুনামগঞ্জী, মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস আরজাবাদ, মাওলানা নাজমুল হাসান কাসেমী, মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস মানিকনগর, মাওলানা মতিউর রহমান গাজীপুরী, লোকমান মাজহারী মাওলানা নাসিরউদ্দিন খান, মাওলানা নূর মোহাম্মদ কাসেমী প্রমূখ।